ঠিক কবে আমার জন্ম হয়েছিল, সেটা মনে নেই, কিন্তু এটুকু বুঝছিলাম, আল্ট্রাসনোতে আমাদের দুই ভাইকে দেখার পর থেকে নাফির মায়ের প্রতি সবার যত্ন বেড়ে গিয়েছিল।নিজের দাম তখন ই বুঝতে শিখেছি। নাফির পেটের ভিতর থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নিচে নামছিলাম , শেষে এই ঘরে (স্ক্রোটাম) স্থায়ী ঠিকানা হলো।
এই নাফির যেদিন জন্ম হলো, সবাই এসে নাফির মুখ দেখে এরপর আমাকে আর আমার ভাই কে খুজছিল, সবার চোখে মুখে সে কি আনন্দ!
আত্নবিশ্বাস তখন তুংগে। কয়দিন পর থেকে নাফিকে ডায়াপার পরানো শুরু করলো কি অসহ্য গরম যে আমাদের লাগতো! , কিন্তু কি আর করা, সবাই তো আর বোঝে না, শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে কম তাপমাত্রায় আমরা কাজ ভালোমতো করতে পারি, এজন্যই তো আমাদের পেটের নিচে আলাদা অন্দরমহলে কম তাপমাত্রায় রাখা হয়।
যা হোক, এভাবে কেটে যাচ্ছিল দিন, কয়েকদিন পর থেকে আমি আসল কাজে নেমে পড়ব, নাফির বংশ রক্ষা করার দায়িত্ব নিবো। এই চিন্তাই করি।
হঠাৎ একদিন স্কুল থেকে নাফি ফেরার পথে কেমন জানি টান লাগল, অসহ্য যন্ত্রণা। মনে হলো, আমার পুরো শরীর ঘুরে গেছে। আমার মাথার কাছের শিরাগুলো টানটান হয়ে আছে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল, কিন্তু কেউ ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল না, বিকালে এল পাশের বাড়ির দাদি, কি একটা তেল মালিশ করে ঝাড়িয়ে দিয়ে চলে গেল। এরপর মোড়ের ঔষধের দোকান থেকে ব্যথার জন্য কি একটা ওষুধ খাওয়ালো নাফিকে। কিন্তু সেই ঔষধ আমার শরীর পর্যন্ত এল না। আমি অসহ্য যন্ত্রণায় কাদতে কাদতে ফুলে যাচ্ছি, কিন্তু কেউ হাস্পাতালে নিলোই না।
সরকারী হাস্পাতালে এমবিবিএস ডাক্তারের কাছে নিলেও অন্তত সে বলে দিতে পারত, অপারেশন করে প্যাচ না ছাড়ালে এভাবে আমি ভালো হবোনা, মরে যাবো।
সারা রাত এভাবে কাটলো, সকালে আমি ব্যথায় নীল হয়ে গেছি। রক্ত চলাচল নাই, অক্সিজেন নাই। নাফির ও জ্বর। শুধু ভাবছি, আমি তো মরেই যাচ্ছি, আমার ভাইয়ের কি অবস্থা। একসাথেই জন্ম, কিন্তু এই অন্দরমহলে আসার পর আর দেখা হয়নি। সময় গড়ায়, বোধশক্তি কমে গেছে, অসাড় হয়ে গেছে শরীর।
কতক্ষন পর শহরের হাস্পাতালে নিয়ে এল মনে নাই। শুধু মনে হল, ডাক্তার পরীক্ষা করে বললো ১ ঘন্টার মধ্যে অপারেশন করতে হবে। হয়ত আমি পচে গেছি। ততক্ষণে আমি কালো হয়ে গেছি, শুধু মাথার কাছের শিরাটা একটু নীল। এরপরও কেউ বুঝলো না, সিদ্ধান্ত নিতে নিতে আরো দেরী। ডাক্তার অপারেশন করে যখন আমাকে বের করল, ততক্ষনে আমি আর বেচে নেই, তাই আমাকে এতদিনের প্রিয় ঘর থেকে শেকড় কেটে বের করে ট্রে তে রেখে দিলো। মনে মনে ভাবলাম, আমাকে ফেলে দেয়ার আগে আমার ভাইটাকে যেন ঘরের ভেতর ভালো করে আটকায়। আমার মত যেন না হয়। দেখলাম, ডাক্তার পরম মমতায় কাজটি করল।। স্বস্তির নি:স্বাস ফেলে চিরবিদায় নিলাম।
বি:দ্র: টরশন টেস্টিস (অণ্ডকোষ ঘুরে যাওয়া) একিউট ইমারজেন্সি। অণ্ডকোষে ব্যাথা হলে একমুহূর্ত দেরী নয়। নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।